কলকাতার বিখ্যাত রায়চৌধুরী পরিবারে ১৯২১ সালের ২ মে রবিবার সত্যজিৎ রায়-এর জন্ম হয়। পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী এবং পিতা সুকুমার রায় ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অমর স্রষ্টা। তাঁর মায়ের নাম সুপ্রভা দেবী। সত্যজিতের ছোটো বেলায় নাম ছিল প্রসাদ। সত্যজিৎ রায়ের ডাকনাম ছিল মানিক। সাহিত্যের আঙ্গিকেই তাঁর বেড়ে ওঠা। তাঁর ভবিষ্যৎ জীবনের বিপুল কর্মকান্ড সেই সাহিত্যেরই অনুসারী। ১৯২৮ সালে মায়ের সঙ্গে শান্তিনিকেতনে গিয়ে প্রথম রবীন্দ্রনাথকে দেখেন সত্যজিৎ রায়। কলকাতার ১০০ নম্বর গড়পার রোডের বাড়ি এবং পরে বকুলবাগান –এর মামার বাড়িতেই বাল্যজীবন অতিবাহিত করেন। ১৯৩০ সালে সত্যজিৎ বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলে ভরতি হন। ১৯৩৯ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর তিনি শিল্পশিক্ষার জন্য শান্তিনিকেতনে যান। সেখানে শিল্পী বিনোদবিহারী মুখে মুখোপাধ্যায়কে তিনি শিল্পগুরু হিসেবে পান। সেখানেই প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রতি সত্যজিতের গভীর অনুরাগ জন্মায়। পরবর্তীকালে তিনি নিজেই বলেছিলেন যে, শান্তিনিকেতনকে না গেলে তিনি পথের পাঁচালী করতেই পারতেন না। সত্যজিৎ রায়ের কর্মজীবন বেশ কয়েক দশক ধরে বিস্তৃত ছিল, যে সময়ে তিনি অপু ট্রিলজি, “পথের পাঁচালী,” “অপরাজিতো,” এবং “অপুর সংসার” এর মতো মাস্টারপিস সহ অসাধারণ কাজ পরিচালনা করেছিলেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরেও, সত্যজিৎ রায় ছিলেন একজন বিশিষ্ট লেখক, তাঁর নামে অসংখ্য ছোট গল্প, প্রবন্ধ এবং উপন্যাস রয়েছে। তিনি একজন পলিম্যাথ ছিলেন, গ্রাফিক ডিজাইন, সঙ্গীত রচনা এবং এমনকি আইকনিক কাল্পনিক গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদা তৈরি করেছিলেন। বংশসূত্রেই সাহিত্যপ্রতিভার উত্তরাধিকার নিয়ে জন্মেছিলেন সত্যজিৎ। ১৯৬০ সালে সন্দেশ পত্রিকার পুনঃপ্রকাশ লগ্নে সত্যজিৎ রায় সৃষ্টি করেন একে একে ফেলুদা, প্রফেসর শঙ্কু, তারিণীখুড়ো-র মতো অসামান্য অনবদ্য চরিত্র। বইয়ের পাতায় ১৯৬৪ সালে ফেলুদার গোয়েন্দাগিরী, বাদশাহী আংটি, সোনার কেল্লা, গ্যাংটকে গণ্ডগোল, জয়বাবা ফেলুনাথ- বেশকিছু রহস্য উপন্যাস ১৯৭৮ অবধি প্রকাশিত হয়।